কথা-রাখা কথা



চিল্কা 


বহুদিন পর আজ আবার....
কয়েকমাস আগের ঘটনা... ছবিগুলো আঁকা ছিল.. ল্যাদ কাটিয়ে লেখা হচ্ছিলো না ... আজ লেখাটা শেষ করলাম..
আমরা কয়েকজন দোল-পূর্নিমার আগেরদিন রাত্রে হঠাৎ বেরিয়ে পড়েছিলাম .. গন্তব্য চিল্কা... জাস্ট ১ ঘন্টার মধ্যে যাবো ঠিক করে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে এলাম আমরা  ....
অনেক গল্প আছে আমাদের সেই পালিয়ে যাওয়া হারিয়ে যাওয়া ভ্রমনকাহিনীর |
আইআইটি র সিকিউরিটি কে ফাঁকি দিয়ে গভীর রাতে সাইকেলে করে পালানো, হাওয়াবিহীন সাইকেল চেপে জ্যোত্স্নার আলোয়ে ভিজে স্টেশন পৌঁছনো,  ট্রেন মিস করা, পরের ট্রেনে ফাঁকা কামরায় শুয়ে শুয়ে যাওয়া, পুরি স্টেশনে টিকিট-চেকারের হাতে ধরা পড়ে ফাইন দেওয়া, একজন ভয়াবহ লোকের অটোরিক্সায় চেপে সাতপাড়া যাওয়া, সেখানে এটিএম না থাকার জন্য এবং আমাদের কারুরু কাছে টাকা-পয়সা যথেষ্ট না থাকার জন্য মেপে মেপে বেঁচে থাকা, প্রায় সারা রাত চিল্কার মাঝে জেটির ওপর বসে আড্ডা মারা, নৌকোয় করে ঘুরতে যাওয়া এবং রাস্তা হারানো, পরদিন চিল্কার জলে নেমে দাপাদাপি করা বিষাক্ত মাছের ভয় উপেক্ষা করে, ফিরে আসার সময় বাস কন্ডাক্টরএর সাথে ঝামেলা, পুরি একস্প্রেসে কয়েক বর্গ-ইঞ্চি জায়গায় কোনরকমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আসা ইত্যাদি নানা কিছু নিয়ে একটা রং-রঙিন উইক এন্ড....



আমরা ক’জন
একজন:         উল্কাপাতের শব্দ শুনেছিলো যারা,
ঘামে ভেজা তাদেরই মধ্যে একজন -
              কক্ষপথ মানতে শেখেনি তাই|

আরেকজন:        আকাশে স্বপ্নের ডানা
                    মাটিতে তার সোঁদা দেওয়াল
               পেরোনোর রোজনামচা

অন্যজন:         কথা আর কান্না পুরনো হলে
                    সে বটগাছ হতে জানে, আবার
               ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাসতেও পারে জলে

নিজে:           সব মানুষই নিজের কাছে সমুদ্র
                    সব সমুদ্রে ঢেউ ওঠে
               কিনারায় শুধু ঝাউবন আর বালি

বাকি একজন:      সোনাই নদীর ধারে নিবিড়
কৃষ্ণা-দ্বাদশীর জ্যোত্স্নায়
বুনো-ফুল কথা বলে  




হঠাৎ 

“চল যাই”
“দূর, কত কাজ! আমার প্ল্যান আছে অন্যকিছু করার”
কাগজের নৌকোরা আর কতদিকে যাবে?
তাই অগত্যা...
সবটুকু পরিপাটি করে রাখা বিছানার চাদর-বালিশ
হাওয়া আর জ্যোত্স্নায় ভেজেনি কখনো|
তবুও ইচ্ছে যেখানে আলো খোঁজে
অচেনা পথ হয়ে,
রোজকার কথা-দেওয়া কথা-রাখা কথাদের
সেখানেই উড়িয়ে পুড়িয়ে দিয়ে
ব্যাগ গোছালুম
ট্রেনের বাঁশি শুনবো বলে|


পথ-পিদিম

লালমাটি পথ ধরে
চেনা বেড়া পাশে রেখে
এগিয়ে চলেছি কজন|
কাগজের স্তুপে আরো কটা
দস্তখত এঁকে দিলে
পথ চলা যেত নিয়মিত পথে?
থাক পড়ে থাক,
সেইসব কাগজ-কলম নিয়ম-কানুন,
বাঁধা থাক ধুলোমাখা ঘরে,
জ্যোত্স্নার আলো মেখে মেখে
আমরা চলেছি পালিয়ে
রেলগাড়ি
কতদূর যাবে?
চলে গেল দূরপাল্লার ট্রেন,
কথা রাখা হলো না এখনো|
কিশোর বয়সী রাত হাতছানি দিয়ে ডাকে|
টেক্কা-বিবি-সাহেবের ভিড়ে তারা সব
নিকোটিন হয়ে গেছে সেই কবে|
এখানে ওখানে ঘুমের আস্তরণ
গরম চায়ের শেষে
রেললাইনে ছুঁড়ে দেওয়া ভাঁড়
আমরা এলোমেলো হাঁটি
ট্রেন এই এলো বলে ....
অবাধ্য মন ফাঁকা কামরায়
জানলা খুলে হাওয়া খাবে এবার |




ভৈরবী
হাসি আর ঠাট্টার সাথে ঘুম মেখে
শুয়ে-বসে আছি
রেলগাড়ি গায় পথ চলবার গান|
কোলাহল মুখরিত ভোরের বাঁশি
স্টেশনে স্টেশনে বাজে,
ঘুম ভাঙা চোখে
আলো হাতড়াই এদিকে-ওদিকে|
খুব চেনা চেনা চেনা ভালোলাগা সুর
পসরা সাজালো, জানালার পাশে,
খবর এনেছে কেউ,
কেউ বয়ে আনে চায়ের চুমুক|
ভোরের বাতাসে দেখি
নতুন মুখ এসেছে
আরমোড়া ভাঙা আঙিনাতে....



আরো কিছুদুর বাকি

আরো কিছুদুর বাকি
আমরা উড়তেই থাকি
চল কয়’জনে মিলে
আলো-হাওয়া মাখি
স্বপ্ন ভাসছে নাকি,
কিছু পথ দিলে ফাঁকি
একসাথে ছবি আঁকি
কিছুটা ভালোলাগা রাখি
এই সময়ের কবরখানায়...



বিজয়রথে

খুচরো খোলামকুচি
দিতে হলো খেসারত,
পথ চুরি করে ফেলেছি যে!
এ পথ সে পথ ঘুরে ভবঘুরে
পাখিদের সাথে আমরাও খুঁজি 
কিছু দানাপানি...

পুস্পক রথ জুটে গেলো
উড়ে গেলো আমাদের সাথে নিয়ে,
তিনচাকার অবাধ্যতায়|
সব রং ভালো হয় না, সব মানুষ-
তবু ছবি আঁকি, এভাবেই আমাদের
কথা জানাজানি...

মানুষের মরে যাওয়া ব্যথা আর খিদে
সবটুকু ভাষা হতে পারে
তবু ঘাটের কাছে জল,
সাথে হাওয়া ছুঁয়ে যায়,
সব ভুলে যেতে পারি,
সব কানাকানি.... 

সে হাওয়ায় চোখ ভিজে যায়,
যখনি সেই জলে ঢেউ ওঠে,
এলোমেলো হয় সব সুর
আমরা সাক্ষী থাকি সেই সব
অলৌকিক ক্যানভাসে সাগরের 
তুলি টানাটানি....



নৌকোবিহার

জলের বুকে জলের যেমন নিবিড় খেলা
আমরা সবাই পাল তুলেছি পালিয়ে গিয়ে
অনেকদূরের নীল মোহনার বিকেলবেলা
আমরা সবাই গান গেয়েছি স্বপ্ন নিয়ে
স্বপ্ন মেখে নানান রকম জলের সাথে
আমরা সবাই শুনছি অপার নীরবতা
পাখির ডানায় স্বাধীন আকাশ দিনে-রাতে
এসব নিয়ে তৈরী হলো গল্প-কথা




রাত-জাগা রাত

এদিকে ওদিকে জল
ঝড়ে এলোমেলো চুল
ক্ষনিকের স্তব্ধতা ধুয়ে
হয়তো বা ভেঙ্গে যাবে ভুল

জলেদের সাথে জল কথা বলে
মন ভেসে যাবে নাকি?
তোমাকে খুঁজছে ঢেউ
তারাদের কথা বলা বাকি

এদিকে ওদিকে আলো
পূর্ণিমায় মুখরিত চাঁদ
জেলে নৌকোর জলছবি ঘেঁসে
আমাদের রাত-জাগা রাত




তুমি 

চিল্কার ক্লান্ত আঁচলে
মুখরিত দিন শেষ হলে
ভেসে যায় সে আলোর সব হাসি গান
তোমাকে খুজছি আমি
টানটান রাত্রিকে ছুঁয়ে
তুমি জলের নিচে শুলে, তুমি শুন্যে ভাসমান





আরাত্রিক  


কথা-রাখা কথাদের সেখানেই রেখে দিতে হলো
যেখানে চন্দ্রাতপ হরিণের চোখে মদিরতা জাগে
উদ্বেল হয় এলেমেলো জল আর জ্বলন্ত হৃদয়
নক্সী কাঁথার মতো জীবনের আগে জীবনকে
ফেলে দিতে হয়| ব্যাথাদাগটুকু থাক
আর সব একলা হারানো কথা
কখনো চোখের জলে কখনো আকাশকে ছুঁয়ে
বৃষ্টি অথবা মেঘ হতে চাওয়া|

সে দিনের সব ঢেউগুলো
রাত্রির উদোম বুকে, নেশাতুর চোখে
এদিকে-ওদিকে পাড় ভেঙ্গে দিলো
আমি তো নীলরং হতে জানি
জানি তারাদের টিমটিমে আলো
চিলেকোঠা ছুঁয়ে এখানেই ঝরে পড়ে
তবু সবটুকু জল হতে জানে
সব দাগ মুছে দিতে পারে
এমন কতগুলো রাত এসেছিলো
তাদের জীবনে?











মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

tukro shorot-1

কুঁচো-কাঁচা দুঃখকথা......

pajore somudrer dheu .....