পোস্টগুলি

দড়ি ধরে মারো টান...

ছবি
১৭২২ সাল। প্রশান্ত মহাসাগর দিয়ে পাড়ি দিচ্ছিল একটি ডাচ অভিযাত্রী জাহাজ। পৃথিবী ঘুরে নতুন দেশ খুঁজে বের করাই তাদের উদ্দেশ্য। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আরও দক্ষিণ পশ্চিমে এগুচ্ছে জাহাজ। চারিদিকে শুধু জল আর জল। হঠাৎ দুরে দেখা গেল ডাঙা। ম্যাপে তো এ ডাঙার তো কোন হদিশ নেই! নাবিকরা মহাখুশি। জাহাজ সেদিকে এগুতে থাকল। সন্ধ্যের মুখে জাহাজ যখন তীরের কাছাকাছি, জাহাজের ডেক থেকে মনে হল শয়ে শয়ে দৈত্যাকার মানুষ দাঁড়িয়ে আছে কিনারায়। এদের এক একজনের উচ্চতা তো চার পাঁচ মিটার হবেই। সবার মুখ গেল শুকিয়ে। ক্যাপ্টেন জেকব রগিভিন জাহাজ নোঙর করতে বললেন। দুশ্চিন্তায় অস্ত্র হাতে নাবিকদের বিনিদ্র রাত কাটল। দিনটা ছিল ৫ই এপ্রিল, ইস্টারের দিন। পরদিন সকাল হতেই ভালো করে তীরের দিকে তাকিয়েই জাহাজসুদ্ধ লোক হেসেই অস্থির। যাদের দেখে দৈত্য মনে হচ্ছিল, সেগুলো আসলে অতিকায় এক একটি মানুষের মূর্তি। উৎসাহে জাহাজ ভিড়ল সেই ডাঙ্গায়। দেখা গেল ভারি সুন্দর একটি দ্বীপ। দ্বীপে জনমানুষ কেউ কোথাও নেই। শুধুই পাথরের প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড মানুষের মূর্তি। লম্বা কান, প্রকাণ্ড মাথাওয়ালা মূর্তিগুলো মনোলিথিক, অর্থাৎ একটাই পাথরকে কেটে কেটে ব...

ছেঁড়া ইতিহাস - ৪

ছবি
কিছু কিছু মানুষ থাকেন যারা আপনভোলা অথচ একটু বেশি একগুঁয়ে| বাকি জগতসংসারে কে কী ভাবলো, কে কী বললো তা নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই| এর থেকেও ব্যাপারটা ভয়ংকর হয় যখন তাঁরা সাধারণ বুদ্ধিসুদ্ধিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে কিছু একটা করবেন বলে মনস্থির করে বসেন | বাকি লোকজন তাঁকে যতোই বোঝানোর চেষ্টা করুক না কেন, তিনি শুনবেন না| কিছুদিন পর হাল সবাই ছেড়ে দিয়ে মানুষটাকে পাগল-ছাগল আখ্যা দিয়ে বিদায় নেয়| মজার ব্যাপার হলো, সেই পাগলটা কিন্তু হাল ছাড়ে না| সুইজারল্যান্ডের হেনরি ডুনান্ট সেই প্রকৃতির মানুষ| তিরিশ বছর বয়েস| বন্ধু বান্ধব বিশেষ নেই| নেহাত গিনিভা শহরের এক সভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম বলে তাঁকে কেউ ঘাঁটায় না| দেশের নাম করা কলেজ কেলভিন থেকে ড্রপ আউট| অবশ্য ড্রপ আউট বলা ভুল, আসল সত্যটা অনেকেই জানেন | পরীক্ষায় বারবার খারাপ গ্রেড পেতেন| তাই কলেজ থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে| এরপরে একটি ব্যাঙ্কে কিছুদিন কাজকর্ম করেছিলেন| বছর পাঁচেক এই ব্যাঙ্কে কাজ করার সুবাদে, তাঁকে ইউরোপের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হতো| হঠাত একদিন ব্যাঙ্কের চাকরিটি ছেড়ে তিনি সেই ভ্রমনকাহিনী নিয়ে একটা বই লিখে ফেললেন| সেই লেখাগুলো ছিল ...

ছেঁড়া ইতিহাস - ৩

ছবি
ম্যাকলিড সাহেবের ট্রেনের গল্প লিখে অনেক বাহবা কুড়োলাম| তাই 'বার' খেয়ে বেহালা নিয়ে আবার লিখছি  :) ছোটবেলা থেকেই ভাবতাম এ জায়গাটার নাম বেহালা কেন? বেহালা একটা বাদ্যযন্ত্রের নাম, ভি জি যোগ কিংবা এল শংকরের বাজানো বেহালার করুণ সুরে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে| কিন্তু খামোখা একটা কোলাহলমুখর জ্যান্ত শহরতলির নাম বেহালা রাখার কোনো মানে হয়! বেহালা চির-উন্নয়নশীল দেশ| এই দেখা গেলো রাস্তাজুড়ে তারাতলার ফ্লাইওভার হয় তো তারপরেই গোটা বেহালার রাস্তা কেটে আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন| সেসব কাটাছেঁড়া শেষ হতে না হতেই মেট্রো| একটা উন্নয়নের ধাক্কা সামলে যে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেব, সে উপায় নেই বেহালাবাসীর| তাই ছোটবেলা থেকেই দেখছি এ জায়গাটার বড় বেহাল দশা| বহুদিন পর্যন্ত আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল “বেহাল” থেকেই জায়গাটার নাম হয়েছে বেহালা| বেহালা জায়গাটার অস্তিত্ব কলকাতা শহরের অনেক আগে থেকে রয়েছে| কতদিন আগে? তা ধরুন আজ থেকে আটশ’ বছর আগের কথা| লখিন্দরের শবদেহ নিয়ে বেহুলার ভেলা গাঙুড় নদী দিয়ে ভেসে গিয়েছিল সাগরের পথে| সে যুগে নদীগুলোর গতিপথ ছিল অন্যরকম| এখনকার হুগলি নদীর গতিপথ তখন এইরকম ছিল না| আদিগঙ্গা বলে আম...

ছেঁড়া ইতিহাস - ২

ছবি
বেহালায় বাড়ি আমার| ছোটোবেলা থেকে শুনে এসেছি অনেকেই জেমস লং সরনীকে রেললাইন বলতেন| উত্তর থেকে দক্ষিণে কলকাতা শহরের বুক চিরে চলে গেছে ন্যাশনাল হাইওয়ে ১১৭, যাকে সবাই ডায়মন্ড হারবার রোড নাম চেনেন| ডায়মন্ড হারবার রোডের সমান্তরাল চলে গেছে শহরের ব্যস্ততম রাস্তাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই জেমস লং সরণী| রিক্সাচালক, অটোচালক বা স্থানীয় লোকজন খামোখা একটা আস্ত রাস্তাকে রেললাইন কেন বলতেন আমার মাথায় ঢুকত না| ভাবতাম সত্যি বুঝি ট্রেন চলে এখানে| কিন্তু বিশ বছরেও এই রাস্তার ধরে কাছে কোনো ট্রেন দেখিনি| কিন্তু ট্রেন চলতো বটে এককালে| এই রাস্তা তখন ছিল ন্যারো গেজ রেল লাইন| "কু ঝিক ঝিক" শব্দ করে কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে চলে যেত কয়লার ইঞ্জিন| কালীঘাট থেকে ফলতা পর্যন্ত এই রেললাইনটি চালাতো ম্যাক্লয়েড লাইট রেলওয়েজ কোম্পানি| লোকে বলতো ম্যাকলিড সাহেবের ট্রেন| তা সেই ম্যাকলিড সাহেবের কোম্পানিই ১৯১৭-র ২৮ মে তারিখে প্রথম কলকাতার বুকে এই রেলগাড়ি চালাতে শুরু করে। রেল চলত কালীঘাট থেকে ফলতা পর্যন্ত। কালীঘাট স্টেশন বলে কোনো স্টেশন ছিলনা| মাঝেরহাট পর্যন্ত এসে ট্রেন নামিয়ে দিতো যাত্রীদের| সেখান থেকে পায়ে হেঁটে লোকে যে...

এলোমেলো-৩

ছবি
ধোঁয়াটে কবিতা খোঁজে সাঁঝবাতি খেলনার ঘর লাস্ট ট্রেন ফিরে গেলে রাত বাড়ে ঝিঁঝিঁদের গানে ঘুমানো গাছের নীচে শরীর পোড়াতে থাকে জ্বর কতোটা পুড়লে বোঝা যায় বলো ভালবাসা মানে?

হঠাত একদিন : লেপাক্ষী ২

ছবি
দ্বিতীয় পর্ব: পুরাকাল| সাল তারিখ সময় ঘেঁটে গেছে| রয়ে গেছে "ওয়ান্স আপন এ টাইম" দিয়ে শুরু হওয়া মুখে মুখে ফেরা মানুষের গল্প, যাদের আমরা বলি, কিংবদন্তি| কিংবদন্তি - এই শব্দটা আমার ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো লাগে| এই শব্দটার মধ্যেই কেমন যেন হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের ভালবাসার খারাপবাসার কাহিনীগুলো মিলেমিশে যায়| লেপাক্ষী মন্দির নিয়েও এরকম অনেক কিংবদন্তি রয়েছে| স্কন্দপুরাণ, অগস্ত্য সংহিতা এবং শিবপুরাণে এই জায়গার উল্লেখ আছে| অর্থাত এই জায়গাটা নিয়ে গল্পকথা অনেকদিনের| এখুনি হয় তো কেউ বলে উঠবেন, "পুরাণে আছে যখন, তা আবার গপ্পকথা হলো নাকি? সেডা তো নির্ভেজাল সইত্য"| হে জনমেজয়, কান খুলে শুনে নাও, পুরাণ হলো আসমুদ্রহিমাচল ভারতবর্ষের শত-সহস্র জনগোষ্ঠির সঞ্চয় করে রাখা লক্ষ লক্ষ কিংবদন্তির সংকলন| পুরাণ শব্দের মানে হলো প্রাচীন| পুরাকালের ঘটনা| আমরা কথায় কথায় বেদ-পুরাণ পেড়ে আনি| যুক্তিতে না কুলালেই তেড়ে দুটো গালাগাল দিয়ে বলি "এসব ব্যাদে আর পুরাণে আছে"| যেহেতু দুই পক্ষের কেউই কোনদিন বেদ বা পুরাণ চোখে দেখেনি, তর্কটা এখানেই থেমে যায়| বেদে কিংবা পুরাণে আছে যখন! বেদ আর পুরাণ কিন্তু ট...

হঠাত একদিন: লেপাক্ষী - ১

ছবি
১৯১০ সাল| হ্যামিল্টন সাহেব ঘোড়ায় চড়ে চলেছেন| লন্ডনের নাম করা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার তিনি| পুরোনো সব গথিক আর রোমান স্থাপত্য এবং তাদের স্ট্রাকচার নিয়ে তাঁর অগাধ জ্ঞান| এখন ইন্ডিয়াতে এসেছেন এদেশের পুরনো মন্দির-টন্দির নিয়ে কাজ করতে| আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া থেকে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে| এদেশে এসে দেখলেন, নেটিভরা বহু কোটি মন্দির বানিয়ে রেখেছে সারা দেশ জুড়ে| সেসব জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ করে যেতে হচ্ছে| রেনেসাঁরও অনেক আগে এদেশে লোকজন বিশাল বিশাল অট্টালিকা আর মন্দির তৈরী করে গেছে| মাঝে মাঝে অবাক-ও লাগে তাঁর| তা কিছুদিন হলো, দিব্য দক্ষিন ভারতের ব্যাঙ্গালোর নামের ছোট্ট হিল-স্টেশনে সামারটা কাটাচ্ছিলেন, বাদ সাধলেন এএসএই-এর ডিরেক্টর| তাই তাঁকে ছুটতে হচ্ছে দেড়শ কিলোমিটার দুরে কোন এক ধ্যাড়ধেড়ে অনন্তপুরম গ্রামে| সেখানে নাকি একটা মন্দির ভেঙে পড়বে পড়বে করছে| এত্তো মন্দির, একটা ভাঙ্গলেই বা কি? যাই হোক, অর্ডার ইজ অর্ডার| সোলার হ্যাট চাপিয়ে চললেন সাহেব| মন্দির সারাতে| অনেক দুরের পথ| সঙ্গে তাঁর আসিস্টান্ট আর সাঙ্গপাঙ্গরাও চলেছে| ২০১৭ সাল| ছোটবেলায় ভাবতাম রাজা-উজির হব| আইটি কোম্পানিতে চাকরি করে জীবনটা এখন...