দাদুভাই

খড়গপুর রেলওয়ে বয়েজ স্কুলের অশীতিপর এক প্রাক্তন অঙ্কের শিক্ষক আজ মধ্যরাতে মারা গিয়েছেন...খবরটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়... কিন্তু ভোটের সময়ে কোটি কোটি প্রতিশ্রুতির বন্যা এবং চমক, চিটফান্ডকান্ডের তদন্ত, আসামে জঙ্গিহানা, বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে গণধর্ষণ ইত্যাদি ইত্যাদি হাজার গুরুত্বপূর্ণ খবরের ভিড়ে আবিষ্কার করলাম, যাদের আমি মনের গভীর থেকে শ্রদ্ধা করতে পারি, এমন মানুষ এমনিতেই বড় কম, আরো একজন কমে গেল...
ঘটনাচক্রে সেই অশক্ত দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ আমার আত্মীয় এবং খুব প্রিয় একজন মানুষ... আমার ছোটবেলার অনেক বড় বড় স্মৃতি এই মানুষটার সাথে জড়িয়ে আছে... আমার শিশুমনের মধ্যে প্রথম এই মানুষটা যুক্তি দিয়ে বিচার করার বোধ জাগিয়েছিলেন....ছোটবেলায় আমার হাজারো প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতেন...ছ'সাত বছরের ছোট্ট ছেলেকে তিনি বলতেন "তুমি যা বোঝো, যা জানো, তাই তোমার কাছে ভগবান"... পুজো করতে বসে উনি যখন 'ওঁ' উচ্চারণ করতেন, সেই শব্দের বিন্দু-বিসর্গ-চন্দ্রবিন্দু না বুঝেও আমার শরীরে একটা শিহরণ জাগত.... সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে থাকা তাঁর অসংখ্য লব্ধ-প্রতিষ্ঠিত ছাত্রদের কথা আমি অন্যের মুখে শুনেছি... কিন্তু আমার চেতনাতীত শৈশবের শিক্ষক তিনি...
বৃষ্টি যখন ধুইয়ে দিচ্ছে
দগ্ধ খড়কুটো
স্থির রইলো অধীর সময়ে
অন্ধ চোখদুটো
চাহনি তোমার আলোকপানে
স্মৃতি দালানময়
পাঁচভৌতিক যন্ত্রণারা
এখন তোমার নয়
গল্প ছিল সকাল বিকাল
আদুরে আলগোছে
তুমি তো নেই গল্পগুলো
আজও রয়ে গেছে
কাগজ কলম আঁকি বুঁকি
অনেক অঙ্ক বাকি
অঙ্ক কষার হিসেব নিকেশ
চুকিয়ে দিলে নাকি?
তোমার পুজোর সময় হলে
অন্য রকম গন্ধ
ধুপ-ধুনো আর তোমার কন্ঠে
ওঙ্কারময় ছন্দ
উঠোনজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া
কালোজামের আঁটি
উঠোনে তোমার সামনে এখন
অনেক ধুপকাঠি
ছাদে রাখা টবের সারি
টুকরো কানাকানি
খুচরো আমার বাল্যস্মৃতি
মাঝরাতে আসমানী

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

tukro shorot-1

কুঁচো-কাঁচা দুঃখকথা......

pajore somudrer dheu .....